কম্পিউটার ভাইরাস কি? কম্পিউটার ভাইরাসের প্রভাব বা ক্ষতিসমূহ
আজকে আমরা জানবো কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি, এবং কিভাবে এই কম্পিউটার ভাইরাস (Computer Virus) কাজ করে। আমাদের সবার জীবনে ইন্টারনেট একটি খুবই গুরুত্বপূর্ন অংশ আর তা সব দিক থেকেই প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংযুক্ত রয়েছে। আর এই প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এর প্রয়োগ বাড়ার সাথে সাথে কম্পিউটার ভাইরাস এর ঝুঁকিও প্রবল ভাবে বেড়ে চলেছে। এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে দৈনিন্দন কাজের নিরিখে কম্পিউটার খুবই প্রয়োজনীয় একটি মেশিন যা ছাড়া এখন প্রায় অনেক কাজই হয়না।
আমরা অনেকেই তো ভাইরাস বা কম্পিউটার ভাইরাস এর নামটি শুনেছি তবে অনেকেই এর মৌলিক বিষয়গুলি জানিনা। যেরকম, এই কম্পিউটার ভাইরাস কি, কিভাবে কাজ করে, এর লক্ষণ, কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকারের হয়ে থাকে। তাই চলুন এই পোস্টে সংক্ষেপে আমরা তা জেনেনি।
কম্পিউটার ভাইরাস কি? (What is Computer Virus?)
কম্পিউটার ভাইরাস হল একটি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার বা ফাইল যা আপনার অবগতি বা অনুমতি ছাড়াই আপনার কম্পিউটার এর মধ্যে প্রবেশ করে এবং নিজের কপি বা অনুরূপ বানিয়ে ছড়িয়ে কম্পিউটারকে সংক্রমিত করে। এটি কম্পিউটার সিস্টেম এর ক্ষতি করার পাশাপাশি কম্পিউটারে থাকা গোপনীয় বা সংবেদনশীল তথ্য নষ্ঠ বা চুরি করে এর অপব্যাবহার করতে পারে, যা আপনি কখনোই চাইবেন না।
এছাড়াও Computer এর মধ্যে বেশ কিছু ভাবে প্রবেশ করতে পারে আর যদি প্রবেশ করে সেই ক্ষেত্রে আপনার System fail, কম্পিউটার স্লো বা ধীর করে দেবে, আপনাকে কোনো ফাইল এক্সেস বা খুলতে দেবে না এবং এরকম আরো বিভিন্ন ভাবে কম্পিউটারকে একদম ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলবে। এবার চলুন জেনেনি কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার হয় আর তা কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার এর হয়? (Types of Computer Viruses?)
কম্পিউটার ভাইরাস এর প্রকারভেদ আলোচনা করলে সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের Computer Virus আছে। তবে এদের মধ্যে থেকে সব থেকে ক্ষতিকারক এবং যে সমস্ত ভাইরাস গুলি বেশি কম্পিউটার সিস্টেমকে আক্রমণ করে তা হল_
১. Ransomware: এটি এমন একটি ভাইরাস যা কম্পিউটার এর মধ্যে প্রবেশ করে ইউসার এর ফাইল এনক্রিপ্ট বা Encrypt করে দেয়। এবং ইউসার এর কাছে থেকে একটি মুক্তিপণ চায় তাকে পুনরায় ফাইল এক্সেস অথবা ডিক্রিপ্ট করার জন্য।
২. Trojan horse: Virus এর মধ্যে জনপ্রিয় এবং বেশি আক্রান্ত করেছে এরকম Computer Virus এর মধ্যে একটি হল এই ট্রোজান হর্স। এটি একটি ম্যালওয়্যার যা নিজেকে বৈধ প্রোগ্রাম বা কোড হিসাবে দেখায় এবং ব্যবহারকারীদের ডাউনলোড ও ইন্সটল করতে প্রতারিত করে। আর ইনস্টল করার পর আপনার অজান্তেই হ্যাকারদের কাছে আপনার কম্পিউটার এর মধ্যে থাকা তথ্যের এক্সেস চলে যায়।
৩. Adware: এই ভাইরাসটি আপনার কম্পিউটার এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় এডস বা অ্যাড পপ আপ করে প্রদর্শিত করবে আর আপনার কম্পিউটারকে স্লো বা ধীর করে দেবে এবং বার বার কম্পিউটারকে আটকে বা হ্যাং করে শাটডাউন বা রিস্টার্ট করতে থাকবে।
৪. Spyware: এর নাম দেখেই বুঝতেই পারবেন যে এর কাজ কি। এটি ইউসার এর কম্পিউটার এর মধ্যে প্রবেশ করে খুবই গোপন তথ্য যেরকম ব্যাঙ্কিং তথ্য, লগইন তথ্য এবং পার্সোনাল ও সংবেদনশীল ডাটা চুরি করে নেবে ইউসার এর কোনো অবগতি ছাড়াই।
৫. Worms: এগুলি Self-replicating ভাইরাস যা স্ব-প্রতিলিপি হয় এবং ইউসার এর কম্পিউটার মধ্যে ছড়াতে থাকে আর ইউসার এর চোখে না পরে। এরপর ধীরে ধীরে কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক এর ক্ষতি করতে থাকে আর ব্যাবহারকারী সহজে বুজতেও পারে না।
৬. File infectors: এই সমস্ত ভাইরাস গুলি কোনো প্রোগ্রাম বা ফাইল এর সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে রাখে আর যখন প্রোগ্রামটিকে রান বা খোলা হয় সাথে সাথে এই ভাইরাসটি সিস্টেম এর মধ্যে থাকা ইউসার এর ফাইলসকে সংক্রমিত করে।
৭. Boot sector viruses: এটি কম্পিউটার মধ্যে থাকা হার্ড ড্রাইভার এর বুট সেক্টর গুলিকে আক্রান্ত করে। বিশেষ করে যেই ড্রাইভ এর মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল থাকে। তাই যখন কম্পিউটার চালু করা হয় এই ধরণের ভাইরাস গুলিও একটিভ হয়ে আপনার কম্পউটার এর মধ্যে থাকা অন্যান্য হার্ডওয়্যার বা পার্টস এরও ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তো এরকম আরো ভাইরাস এবং তাদের বৈশিষ্ট্য আছে যা আমাদের সিস্টেম এর মধ্যে প্রবেশ করে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় বা আক্রমন করে?
যদিও ওপরে Computer Virus এর প্রকার জানার সাথে সাথে কিছুটা বুঝতেই পেরেছেন যে কিভাবে ভাইরাস প্রবেশ করে। তাবে আমাদের কম্পিউটার এর মধ্যে ভাইরাস ঢোকার সব থেকে বড় কারণ বা মাধ্যমগুলি হল-
★ Internet বা ইন্টারনেট: কম্পিউটার এর মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করার সব থেকে বড় মাধ্যম হল ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কোনো ফাইল ডাউনলোড থেকে শুরু করে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার ফলেও ভাইরাস কম্পিউটারে ঢোকে বা ছড়ায়।
★ USB বা External Drives: কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করার আরো একটি বড় কারণ হল এই USB, Pendrive, External HDD এবং স্মার্টফোন যখন আমরা কম্পিউটারে Connect করি, তখন যদি এই সমস্ত USB বা External Drives এর মধ্যে ভাইরাস থাকে তাহলে তা সহজেই আপনার কম্পিউটারেও প্রবেশ করে যাবে।
★ Attachments: জিমেইল বা অন্যান্য ইমেইল ক্লায়েন্ট দ্বারা এবং ক্লাউড স্টোরেজ ইত্যাদি দ্বারাও আমরা অনেক ফাইল বা মেইলে গ্রহণ করে থাকে। এবং এর মধ্যে অনেক Spam এমিল ও তাতে কিছু Attachments ফাইলস থাকে। আর তা যদি আমরা ডাউনলোড এবং তা ওপেন করি সেই ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের মধ্যে ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ বা ক্ষতি করে? (How Do Computer Viruses Work?)
ওপরের বিষয় থেকে বুঝতেই পেরেছেন যে কত রকমের ভাইরাস হয় এবং কিভাবে কম্পিউটার এর মধ্যে তা প্রবেশ করে যায়। এবার চলুন জেনেনি যে এই কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে বা কম্পিউটারের ক্ষতি করে। আর কিভাবেই বা বুঝবেন। আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটার এর ফাইল ভাইরাস দ্বারা ইনফেক্টেড বা আক্রান্ত হয়েছে অর্থাৎ এর লক্ষণ গুলি কি জেনেনি চলুন।
★ কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে দেখবেন আপনার পিসি অনেক স্লো বা ধীরে কাজ করছে এবং বার বার Hang বা Freeze হয়ে যাচ্ছে।
★ আপনার ইচ্ছা বা অনুমতি ছাড়াই অটোমেটিক একাধিক সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে যাবে এবং আপনার কম্পিউটার এর বিভিন্ন সেটিংস পরিবর্তন হয়ে যাবে।
★ কম্পিউটারে থাকা গোপন ও সংবেদনশীল তথ্য চুরি হয়ে যাবে এবং তা আর এক্সেস করতে দেবে না।
★ দেখবেন আপনার ডিসপ্লে এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় অ্যাড ও ব্রাউজার ট্যাব গুলি খুলে যেতে পারে।
★ এবং আপনার কম্পিউটার এর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে আর আপনার সাথে যুক্ত থাকা বা আপনার পিসি দ্বারা অন্যান্য কম্পিউটারকেও আক্রমণ করার চেষ্টা করবে।
আর এই সমস্ত বিষয় গুলি আপনি দেখতে বা বুঝতে পারবেন যদি আপনার কম্পিউটার এর মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করে। সহজ ভাবে বললে যদি দেখেন যে আপনার কম্পিউটার মধ্যে এরকম কিছু সন্দেহভাজক কার্যকলাপ চলছে তাহলে সম্ভাবনা আছে যে, আপনার পিসি বা কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখা যায় বা প্রতিরোধ করা যায়ঃ-
ওপরে তো আমরা জানলাম যে কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে, এর প্রকার, কিভাবে কাজ করে এর লক্ষণ এবং বৈশিষ্ট্য কি রকমের হয়ে থাকে।
তাহলে এবার চলুন সব থেকে গুরত্বপূর্ন বিষয়টি জেনেনি যে কিভাবে এই কম্পিউটার ভাইরাস থেকে দূরে বা সাবধানে থাকবো আমরা। আর যদিওবা ভাইরাস প্রবেশ করে যায়, তাহলে তার প্রতিরোধ কিভাবে করতে হয় আর কম্পিউটার থেকে ভাইরাস সরাতে হয় তা জেনেনি। আর এ কম্পিউটার ভাইরাস আমাদের পিসি বা কম্পিউটার মধ্যে যাতে না ঢুকে পরে আর ঢুকে পড়লেও তা যেন কোনো ক্ষতি না করতে পারে।
১. Antivirus Software: নিজের সিস্টেমকে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার সব থেকে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হলো এন্টিভাইরাস এর ব্যবহার। এতে আপনার কম্পিউটারের মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভবনা কমে যায় এবং প্রবেশ করলেও তা কম্পিউটার এর ক্ষতি করার আগেই এন্টিভাইরাস তা সনাক্ত করে মুছে ফেলবে।
২. Updates System & Software: অবশ্যই চেষ্টা করুন কম্পিউটার অপরেটিং সিস্টেম এবং এর মধ্যে থাকা অন্যান্য সফটওয়্যার গুলি আপডেট বা Up to date রাখার। এতে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা আরো কমে যায়।
৩. Unknown Websites: অজানা ওয়েবসাইট এর মধ্যে কখনোই প্রবেশ করবেন না এবং সেই সমস্ত সাইট থেকে একদমই কোনো ফাইল ডাউনলোড ও সিস্টেম এর মধ্যে তা ইনস্টল বা ওপেন করবেন না। এটি কম্পিউটার এর মধ্যে ভাইরাস ঢোকার একটি বড় কারণ।
৪. Unknown Software: অনেক সময় আমরা অনলাইন সার্চ করে অজানা সাইট এর মধ্যে প্রবেশ করে সেখান থেকে অজানা বা ক্র্যাক সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নিজের কম্পিউটার এর মধ্যে ইনস্টল করি। তা একদমই করতে যাবেন না কারণ এদের উদ্দেশই থাকে আপনার সিস্টেম হ্যাক বা গোপন তথ্য চুরি করা বা কম্পিউটার এর ক্ষতি করার। তাই এই সমস্ত প্রোগ্রামের মধ্যে ভাইরাস সংযুক্ত থাকতে পারে আর তা ব্যবহার করার ফলে সিস্টেম আক্রান্ত হতে পারে।
এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো পোস্ট এর জন্য অবশ্যই আমাদের সাইট সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং ডেইলি ভিজিট করতে থাকুন।
0 Comments